বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

সাঁওতাল

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী | NCTB BOOK

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি প্রধান নৃগোষ্ঠী হলো সাঁওতাল। তারা রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া জেলায় বাস করে। ধারণা করা হয়, সাঁওতালদের পূর্বপুরুষরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের এসব অঞ্চলে আসে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে সাঁওতালদের বসবাস রয়েছে।

সাঁওতালরা অস্ট্রালয়েড নৃগোষ্ঠীভুক্ত লোক। তাঁদের দেহের রং কালো, উচ্চতা মাঝারি ধরনের এবং চুল কালো ও ঈষৎ ঢেউ খেলানো ।

সামাজিক জীবন : সাঁওতাল সমাজ হলো পিতৃতান্ত্রিক। তাদের সমাজে পিতার সূত্র ধরে সন্তানের দল ও গোত্র পরিচয় নির্ণয় করা হয়। সাঁওতাল সমাজের মূল ভিত্তি হচ্ছে গ্রাম-পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত পরিচালনার জন্য সাধারণত পাঁচজন সদস্য থাকেন। এরা হলো মাঞ্জহি হারাম, জগমাহি, জগপরানিক, গোডেৎ ও নায়কি। নারকিকে তারা পঞ্চায়েত সদস্য নয় বরং ধর্মগুরু হিসাবে মনে করে ।
 

অর্থনৈতিক জীবন : সাঁওতালদের প্রধান জীবিকা হলো কৃষি। বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় তারা মূলত কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। নারী ও পুরুষ উভয়ই ক্ষেতে কাজ করে। তারা ধান, সরিষা, তামাক, মরিচ, তিল, ইক্ষু প্রভৃতি ফসলের চাষ করে। তাছাড়া বাঁশ, বেত, শালপাতা প্রভৃতি দ্বারা নানা প্রকার মাদুর, ঝাড়ু প্রভৃতি তৈরি করে নিজেদের প্রয়োজন মিটায় ও হাটে বিক্রি করে।

ধর্মীয় জীবন : সাঁওতালরা প্রধানত প্রকৃতি পূজারি। তবে এদের একাংশ খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং তারা খ্রিষ্ট ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।

সাংস্কৃতিক জীবন : সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত। সাধারণত সাঁওতালরা মাটির ঘরে বাস করে। তাদের বাড়ির দেয়াল মাটির তৈরি এবং তাতে খড়ের ছাউনি থাকে। সাঁওতালরা তাদের ঘর-বাড়ি খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে।

সাঁওতালদের নিজস্ব উৎসবাদির মধ্যে 'সোহরাই' এবং 'বাহা' উল্লেখযোগ্য। তাদের সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান হলো ‘ঝুমুর নাচ'। সাঁওতালদের বিবাহ অনুষ্ঠানে আয়োজিত হয় 'দোন' ও 'ঝিকা' নাচ ।

সাঁওতাল মেয়েরা শাড়ি পরে। পুরুষরা ধুতি এবং ইদানীংকালে লুঙ্গিও পরে থাকে। সাঁওতালরা অলঙ্কারপ্রিয়। মেয়েরা হাতে ও গলায় পিতলের বা কাঁসার গহনা পরে। অনেক পুরুষ সাঁওতালও অলঙ্কার ব্যবহার করে । পুরুষদের কেউ কেউ গলায় মালা ও হাতে বালা পরে থাকে।

সাঁওতালদের মধ্যে শিক্ষিতের হার খুব কম হলেও বর্তমানে সাঁওতাল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সংঘটিত সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ইংরেজ শাসন শোষণের বিরুদ্ধে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক বিদ্রোহ । এই বিদ্রোহের নায়ক দুই ভাই সিধু ও কানুকে সাঁওতালরা বীর হিসেবে ভক্তি করে।

কাজ :
সাঁওতালদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

জীবনব্যবস্থাবৈশিষ্ট্য
সামাজিক 
অর্থনৈতিক 
সাংস্কৃতিক 
ধর্মীয় 
Content added By

আরও দেখুন...

Promotion